বীমা আইন সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব তোপের মুখে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ড.আসলাম আলম অপসারণ দাবি করে বেনামে পোস্টারিং

প্রকাশিত: ১২:০১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০২৫

বিশেষ প্রতিনিধি : বীমা আইন সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে যেয়ে তোপের মুখে পড়েছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম। বীমা আইন সংশোধন প্রশ্নে বীমা খাত এখন ঐক্যমত্যে আসতে পারছে না। বীমা ব্যবসায়িদের তীব্র আপত্তির মুখে আইডিআরএ’র ডাকা বৈঠকটি স্থগিত করা হলেও আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলমের অপসারণ দাবিতে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় ভবনের দেয়ালে দেয়ালে বেনামি পোস্টারিং সাঁটানো হয়েছে। কে বা কারা এই পোস্টারিং করেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না হলেও, অনেকেই ধারনা করছেন, বীমা আইন সংশোধনের বিরোধী কোন পক্ষ এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। পোস্টারে কিছু বিতর্কীত ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। আইডিআরএ ও সাধারণ বীমা করপোরেশনের ভবনের দেয়ালে আজ শনিবার (৮ নভেম্বর) এসব পোস্টার দেখা গেছে।

জানা গেছে, বীমা আইন সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) আইডিআরএ’র কার্যালয়ে বিআইএ’র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু বৈঠক অনুষ্ঠানের কয়েক ঘন্টা আগে বৈঠকটি স্থগিত করা হয়। এর একদিন আগে বুধবার (৫ নভেম্বর) ঢাকা ক্লাবে বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বিআইএ বৈঠক করে। এই বৈঠকে বীমা আইন সংশোধনের খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে কোন কোন বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান বীমা আইন সংশোধনের বিরোধিতা করে কঠোর ভাষায় বক্তব্য রাখেন। একজন চেয়ারম্যান বীমা আইন সংশোধনের নামে এ সব তামাশা বন্ধ করার দাবী জানিয়ে বলেন, প্রয়োজনে আমরা আইডিআরএ বন্ধ করে দিব।

এদিকে রাষ্ট্র মালিকানাধীন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ২০১৯ সালের বীমা আইনের ১৭ ধারা বাতিলের উদ্যোগের তীব্র বিরোধিতা করে আন্দোলনের হুমকি দেন। বীমা কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্বকারি সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের দাবীর মুখে বীমা আইন সংশোধনীর খসড়া প্রস্তাবে ২০১৯ সালের বীমা আইনের ১৭ ধারা বাতিলের প্রস্তাব করা হয়। এই প্রস্তাব গৃহীত হলে সাধারন বীমায় বেসরকারি নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বীমার ৫০ শতাংশ পুনর্বিমা করার বাধ্যবাধকতা থাকবে না। সাধারন বীমা কর্পোরেশনের কর্মচারী এসোসিয়েশনের বক্তব্য হচ্ছে, এই সংশোধনী গৃহীত হলে সাধারন বীমা অর্থ সংকটে পড়বে। সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাবে। বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলো বিদেশে পুনর্বিমা করার নামে অর্থ পাচার করার সুযোগ পাবে। আইডিআরএ বীমা আইন হালনাগাদ করতে যেয়ে ঊভয় পক্ষের চাপের মুখে পড়েছে। আইডিআরএ’র প্রস্তাবিত বীমা আইন সংশোধনীতে ১৭টি ধারা পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর অনেক ধারার বিরোধিতা করছে বীমা ব্যবসায়িরা। এ দিকে আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বীমা খাত বর্তমানে খুবই নাজুক অবস্থায় আছে। বীমা কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা সীমিত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে অনিয়মের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষনের স্বার্থে আইন সংশোধনের কোন বিকল্প নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে বীমা খাত আরও ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বীমা করপোরেশন আইন-২০১৯ সংশোধন প্রক্রিয়া বন্ধসহ কয়েক দফা দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছে সাধারণ বীমা করপোরেশন কর্মচারী ইউনিয়ন।

তাদের অভিযোগ, প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো বাস্তবায়িত হলে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাবে এবং সাধারণ বীমা করপোরেশন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে বিদেশে পুনর্বীমার নামে অর্থপাচারের ঝুঁকি বাড়বে।
সাধারন বীমা কর্পোরেশনের আন্দোলনকারিদের মতে আইডিআরএর প্রস্তাবিত বীমা করপোরেশন আইন সংশোধনের যে ১৭টি ধারা পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত প্রস্তাবটি হলো ২০১৯ সালের আইনের ১৭ ধারা বাতিলের উদ্যোগ। ওই ধারায় বেসরকারি নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর পুনর্বীমাযোগ্য প্রিমিয়ামের ৫০ শতাংশ সাধারণ বীমা করপোরেশনে পুনর্বীমা করার বাধ্যবাধকতা বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ ছাড়া ১৬ ধারার সংশোধনীতে বলা হয়েছে, বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে ভাগ করে দেওয়া ৫০ শতাংশ প্রিমিয়ামের বিপরীতে কোনো দাবি উঠলে সেই দাবি পরিশোধ করবে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি কোম্পানিই। একই সঙ্গে সরকারি সম্পত্তির সংজ্ঞায়ও বড় পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

পোস্টারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আইডিআরএ চেয়ারম্যান আসলাম আলমসহ কয়েকজনের একটি ছবিও যুক্ত করা হয়েছে। এসব পোস্টার আইডিআরএ ভবন (৩৭, দিলকুশা) ও সাধারণ বীমা করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় ভবন (৩৩, দিলকুশা) এলাকায় সাঁটানো হয়েছে।